বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ভোলা জেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ জেলা। এটি বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম নদীবেষ্টিত দ্বীপ হিসেবে খ্যাত। এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগরের জলরাশি, যা জেলার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। আমাদের আজকের ভোলা জেলার নামকরণের ইতিহাস
ভোলা জেলার নামকরণের ইতিহাস
ভোলার ইতিহাস বহু প্রাচীন। জানা যায়, এটি মেঘনা নদীর পলি জমে ধীরে ধীরে গঠিত হয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে এটি ‘আলেকজান্ডার সাব-ডিভিশন’ নামে পরিচিত ছিল। পরে ১৮৪৫ সালে এখানে প্রথম থানা স্থাপন হয়, ১৯৪৮ সালে মহকুমায় উন্নীত হয় এবং ১৯৮৪ সালে পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
জেলার নামকরণ নিয়ে একটি প্রচলিত মত হলো – এখানে ‘ভোলা গাজী’ নামের এক জনহিতৈষী বসবাস করতেন। তার নামানুসারেই এ অঞ্চলের নাম হয় ‘ভোলা’।
ভোলা জেলার মোট জনসংখ্যা কত
বাংলাদেশের বৃহত্তম বদ্বীপ জেলার জনসংখ্যা নেহাত কম নয়। সর্বশেষ জনশুমারি ২০২২ অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা: প্রায় ২০,৩৭,৮৫৫ জন। এত জনসংখ্যা সত্তেও আপনি জেলায় বাস্তবে দেখতে পাবেন না কেননা এই জেলার বেশি অংশের পুরুষ মানুষ রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলায় বিভিন্ন পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের মধ্যে পুরুষ: প্রায় ১০,০৮,৬৭৫ জন আর নারী: প্রায় ১০,২৯,১৮০ জন।
আরো পড়ুন
ভোলা জেলার আয়তন কত
অন্যান্য জেলার চেয়ে কম ছোট নয় ভোলা। ৪ টি সংসদীয় আসন রয়েছে এই দ্বীপে যথাক্রমে ১১৫ ভোলা সদর, ১১৬ দৌলতখান উপজেলা ও বোরহানউদ্দিন, ১১৭ লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা। শেষে ১১৮ তম আসন হলো চরফশ্যান উপজেলা ও মনপুরা উপজেলা। এই জেলার মূল আয়তন: প্রায় ৩,৪০৩.৪৮ বর্গকিলোমিটার।
ভোলা জেলার উপজেলা কতটি
ভোলা জেলার মোট ৭টি উপজেলা রয়েছে। নিচে উপজেলা গুলোর নাম তুলে ধরলাম।
১. ভোলা সদর
২. দৌলতখান
৩. বোরহানউদ্দিন
৪. লালমোহন
৫. চরফ্যাশন
৬. তজুমদ্দিন
৭. মনপুরা
ভোলা জেলার অর্থনীতি
ভোলা জেলার অর্থনীতি কৃষি ও মৎস্যকেন্দ্রিক। ধান, নারিকেল, সুপারি এবং বিশেষ করে ইলিশ মাছ এখানকার প্রধান উৎপাদিত পণ্য। নদীমাতৃক এলাকা হওয়ায় এখানে মাছ ধরার পেশায় নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা অনেক।
ভোলার শুটকি, কচু, এবং শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত গ্রামীণ বাজারগুলো এখানকার ঐতিহ্য বহন করে। নদীভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও এখানকার মানুষ পরিশ্রমী ও সংগ্রামী।
ভোলা জেলার সংস্কৃতি
ভোলায় রয়েছে অনেক প্রাচীন মসজিদ, মন্দির ও জমিদার বাড়ি। স্থানীয় সংস্কৃতি, বৈশাখী মেলা, ইলিশ উৎসব, এবং ওরস শরীফগুলো এখানকার ধর্মীয় ও সামাজিক ঐক্যের পরিচায়ক। এছাড়া এক সময় এই অঞ্চলে পতুগিজরা থাকতো বলে বিভিন্ন বইয়ে তথ্য পাওয়া যায়।
এছাড়া মনপুরা দ্বীপ তার অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন সম্ভাবনার জন্য পরিচিত।
ভোলা জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি
- তোফায়েল আহমেদ – বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাবেক মন্ত্রী
- মেজর জেনারেল সি আর দত্ত – মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের একজন বীর
- আনোয়ার হোসেন মঞ্জু – সাবেক পরিবেশমন্ত্রী
- মোস্তফা কামাল পাশা – লেখক ও গবেষক
আমাদের কথা
ভোলা বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন এলাকা। এখানকার শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড, নদীবন্দর, ও সমুদ্র অর্থনীতি (Blue Economy) সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সড়ক যোগাযোগ, ব্রিজ ও বাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান।
ভোলা একটি ঐতিহাসিক, ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ জেলা। এর নদী, মাছ, উৎসব, কৃষি ও সংস্কৃতি এখানকার মানুষকে গর্বিত করে। আধুনিক উন্নয়নের ছোঁয়ায় এটি একদিন বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপ নেবে – এমনটাই আশা করা যায়।